১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি আব্দুস সামাদ আজাদ : মাটি থেকে মহিরুহ
- আপলোড সময় : ১৫-০১-২০২৫ ১২:০১:৫০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০১-২০২৫ ১২:০১:৫০ পূর্বাহ্ন
মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা::
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আব্দুস সামাদ আজাদ একটি উজ্জ্বল নাম। প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে গিয়ে রাজনীতিতে দাপুটে অবস্থান নেওয়া সামাদ আজাদ যেন মাটি থেকে মহিরুহ। তিনি ছিলেন একজন ত্রিকালদর্শী রাজনীতিবিদ। ব্রিটিশ আমলে তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। পাকিস্তান আমলে একজন সংগ্রামি নেতা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে এর অভ্যুদয় ও রূপান্তরের এক অন্যতম কান্ডারি।
ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনে অসামান্য অবদান রাখেন এই ক্ষণজন্মা পুরুষ। মেধা, ধৈর্য্য ও বিচক্ষণতা দিয়ে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার এক সফল দৃষ্টান্ত আব্দুস সামাদ আজাদ ।
আপাদমস্তক রাজনীতিক সামাদ আজাদ সারাজীবন প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণা লালন করেছেন। উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ ও কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বিশাল কর্ম পরিধি তাকে পরিণত করে এক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে। আজ তাঁর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২২ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন সিলেট জেলার জগন্নাথপুর থানার ভুরাখালী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল ৮৩ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি আব্দুস সামাদ নামেই পরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি নামের সঙ্গে আজাদ সংযুক্ত করেন। স্কুল ছাত্র অবস্থাতেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তিনি সিলেট জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে গণভোটের মাধ্যমে সিলেটের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৮ সালে আব্দুস সামাদ আজাদ সিলেট এমসি কলেজ থেকে ¯œাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু সরকার বিরোধী রাজনীতির কারণে এম এ শেষ পর্বের পরীক্ষা তাঁকে দিতে দেওয়া হয়নি। মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন বিলুপ্ত হয়ে গেলে আবদুস সামাদ আজাদ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক যুবলীগের সঙ্গে স¤পৃক্ত হন। তিনি এই সংগঠনের নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
আব্দুস সামাদ আজাদ একজন ভাষা সংগ্রামী। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের যোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুর রব নিশতার সিলেট সফরে আসলে তিনি একটি ছাত্র প্রতিনিধি দল নিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। তখন ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়। পরে ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তিনি স¤পৃক্ত হন। প্রথমে সিলেট পরে ঢাকায় এই আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে দশজনি মিছিলের প্রস্তাবকও তিনি। ঐদিন তিনি গ্রেপ্তার হন ও কারাবরণ করেন।
১৯৫১ সালে নতুন রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে গণতন্ত্রী দলের প্রার্থী হিসেবে যুক্তফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করে পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনের পর মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ন্যাপে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে ন্যাপের সহ-সম্পাদক ও দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের পর আব্দুস সামাদ আজাদের সমস্ত স¤পদ বাজেয়াপ্ত করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু এক সময় গ্রেপ্তার হন। প্রায় চার বছর জেলে থাকার পর ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে তিনি আবার আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত আপাদমস্তক রাজনীতিক এই জননেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের ১৩-১৬ মে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর আবদুস সামাদ আজাদ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং তাঁকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রীসভায় তাকে পুনরায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীন ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে তিনি সিলেট ২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি সরকারের কৃষি,সমবায় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর আবদুস সামাদ আজাদকে এক সপ্তাহ গৃহবন্দি করে রাখা হয়। পরে ২২ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তার করে জাতীয় চার নেতার সঙ্গে কারাগারে রাখা হয়।
১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যাকা-ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত একই সেলে তিনি তাঁদের সঙ্গে বন্দি ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় সামরিক আদালতে আব্দুস সামাদ আজাদকে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত করা হয়। চার বছর কারাভোগের পর ১৯৭৯ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। মুক্তিলাভের পর সেই সংকটময় সময়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে আত্মনিয়োগ করেন। দলে আত্মকলহ, চরম দ্বন্দ্ব ও ভাঙন দেখা দিলে তিনি দায়িত্বশীল ও দূরদর্শী ভূমিকা পালন করেন।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতেও তাঁর রয়েছে ঐতিহাসিক ভূমিকা। নানাভাবে বিভক্ত দলকে সংগঠিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে আন্দোলন, সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সিলেট-১ ও সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে অংশগ্রহণ করে তিনি পরাজিত হন। পরে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। এসময় সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনে তিনি জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তিনি পুনরায় একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ একুশ বছর পর সরকার গঠন করলে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিরোধী দলের সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
আব্দুস সামাদ আজাদ নিজ দলের বাইরেও অন্যান্য দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা থেকে কর্মী পর্যন্ত সকলের সাথে রাখতেন সদ্ভাব। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার প্রসঙ্গ আসলে দলের ভেতরে একমাত্র আব্দুস সামাদ আজাদেরই নাম আলোচনায় আসে। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলেছিলেন। পরবর্তীতে দলের একটি অংশ ‘ঐক্যমতের সরকার’ প্রতিষ্ঠার কথা বলে আব্দুস সামাদ আজাদের রাষ্ট্রপতি হওয়া আটকে দেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি সাহাব উদ্দিন আহমদ।
বর্তমানে রাজনীতিতে যখন শিষ্টাচার ও পার¯পরিক নৈকট্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে তখন আব্দুস সামাদ আজাদরা ছিলেন অনেকটা সর্বদলীয় অভিভাবক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক জিয়ার বিয়ের সাক্ষী হিসেবে ছিলেন আব্দুস সামাদ আজাদ ও ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। নিজ দলের নেতা তো বটেই বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সরকারি কর্মকর্তাকে যথাযথ সম্মান করা ছিল সামাদ আজাদ চরিত্রের বড় গুণ।
আব্দুস সামাদ আজাদ অসুস্থ অবস্থায় যখন বারডেমে চিকিৎসাধীন তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। ঐসময় তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘পাগলা - জগন্নাথপুর - আউশাকান্দি’ আঞ্চলিক মহাসড়কের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি আদায় করেন। মৃত্যুর পর তৎকালীন বিএনপি সরকার তাঁর মরদেহ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদনসহ ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার উদ্যোগ নেয়। পরে রাজনৈতিক কারণে এমন বিরল সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয় সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই বর্ষিয়ান জননেতাকে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পার¯পরিক যোগাযোগ ও শ্রদ্ধাশীল সম্পর্ককে আব্দুস সামাদ আজাদ খুবই গুরুত্ব দিতেন। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখা প্রণয়ন ও পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে স¤পৃক্তকরণে তার ছিল অসাধারণ ভূমিকা। এমনকি মুজিবনগর সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনেও তিনি কার্যকর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন।
আব্দুস সামাদ আজাদের তিরোধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করে। দল, মত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর ছিল গভীর হৃদ্যতা। একজন সদালাপী, কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে দলের প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল পর্যায়ে তাঁর ছিল ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। রাজনীতির ধ্যান জ্ঞান এই জননেতা গভীর রাত পর্যন্ত কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। বৃদ্ধ বয়সেও অসুস্থ শরীর নিয়ে সাংগঠনিক প্রয়োজন আর সামাজিক অনুষ্ঠানে ছুটে বেড়াতেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল। শুধু নিজ দলের কর্মী নয় ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও সদ্ভাব রাখতেন। প্রয়োজনে বাড়িয়ে দিতেন সাহায্যের হাত। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সামাদ আজাদ কূটনীতিক হিসেবেও ছিলেন সফল। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশের স্বীকৃতি আদায় ও পরবতীতে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ-ভারত পানিবণ্টন চুক্তি কার্যকর করার ক্ষেত্রেও তিনি ভূমিকা পালন করেন। একই বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স¤পাদনে তিনি পালন করেন যুগান্তকারী ভূমিকা।
শুধু রাজনীতি নয় শিল্প, সংস্কৃতির প্রতি তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ। বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিমকে একুশে পদক প্রদানে তিনি পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সংগঠন অন্তপ্রাণ বিচক্ষণ এই জননেতা ছিলেন রাজনীতির এক সাধক পুরুষ। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে ক্রান্তিকাল বিরাজ করছে এই সময়ে আব্দুস সামাদ আজাদের মতো একজন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। রাজনীতি মানে যে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠে বাস্তবতা মেনে দেশের পক্ষে ভূমিকা রাখা সামাদ আজাদ জীবনভর সেই চর্চাই করে গেছেন। জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে গেলেও নতুন প্রজন্মের কাছে আব্দুস সামাদ আজাদের মতো বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদরা অনেকটা অপরিচিত। দেশপ্রেমকে পুঁজি করে, রাজনীতিকে যারা ধ্যান জ্ঞান করে, ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, তারাই যেন ইতিহাসে অনালোচিত, অবহেলিত। প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা।
[লেখক : মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা, সাংবাদিক ও সাবেক জনপ্রতিনিধি]
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ